আপনি মনে করতে পারেন যে, আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বা তার থেকে প্রেসক্রিপশন নেওয়া ছাড়াই ওভার-দ্যা-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশনের ঔষধ সেবন করলে আপনার সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হতে পারে।
কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে শেষ পর্যন্ত এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল ও ক্ষতিকর হতে পারে।
কেননা সেলফ-মেডিসিন (Self-medication) বা নিজের জন্য নিজেই ঔষধ নির্বাচন করার প্রভাব ক্ষতিকারক এবং এটি সম্ভাব্যপর জীবন নাশের হুমকির কারণও হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে সঠিকভাবে অন্তর্নিহিত (মূল) রোগ নির্ণয় করতে না পারার কারণে দীর্ঘকাল রোগে ভুগতে হয়।

আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চলমান রোগের লক্ষণগুলোর চিকিৎসার জন্য নিজেই ঔষধ নির্বাচন করে সেবন করলে প্রতীয়মান হয়। যে, আপনি সঠিকভাবে ভিতরগত রোগ নির্ণয় না করেই চলেছেন।
কিছু কিছু রোগের লক্ষণ যেমনঃ ক্রমাগত জ্বর, অতিরিক্ত চুলকানি, স্কিন রাস, এবং ফুসকুড়ির মত মতো লক্ষণগুলো অন্তর্নিহিত রোগ হিসেবে গণ্য করা হয়।
যার কার্যকর ও সঠিক চিকিৎসার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় করে, চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়।
কিছু ক্ষেত্রে, যেমনঃ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ না করে রেখে দেওয়া গুরুতর জটিলতা তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ৫ দিনের বেশি সময় ধরে কোন রোগের লক্ষণ (যেমনঃ জ্বর, ফুসকুড়ি, অনিদ্রা, বমি, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, সাইনাসের চাপ ইত্যাদি) দেখেন।
তাহলে অবিলম্বে আপনার নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। অন্যথায় আপনি পরবর্তীতে বড় কোন রোগ বা বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
এতে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের অপব্যবহার হয়। এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এর অপব্যবহার শরীরে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে।
শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা অসুস্থতা না থাকলে যদি এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা হয়। তখন এটি (AntibioticsResistance) অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স তৈরি করে। এবং পরবর্তীতে কার্যকরভাবে কাজ করতে ও নিরাময় লাভের বাধা প্রদানকারী হয়।
যখন শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হয়, তখন শরীর ঐ প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
এবং সেই প্রকার ব্যাকটেরিয়া পরিমাণে বৃদ্ধি হতে থাকে ও অ্যান্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তার কার্যকারিতাকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
এমনকি বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার সাথেও ভাগ করে নিতে পারে, যার মধ্যে ক্ষতিকারক এবং উপকারী উভয় ধরণের ব্যাকটেরিয়াই অন্তর্ভুক্ত থাকে। যার ফলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে।
উদাহরন স্বরুপ বলা যায়: যে যখন আপনার সাধারণ সর্দি-কাশি বা অন্য কোনও ভাইরাল সংক্রমণ হয়, তখন এর থেকে সুস্থ্য হওয়ার জন্য নিজর মনগড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করলে ভাইরাস দূর হবে না।
বরং, এটি আপনার শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে এবং শরীরে বিদ্যমান ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সাথে সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাগ করে নেবে। যার ফলে আপনার সেই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হবে।
এবং ধীরে ধীরে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ কাজ করা বন্ধ করে দিবে। এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স হওয়ার কারণে আপনার আরোগ্য লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সুতরাং কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন ছাড়া,নিজের পছন্দমত মনগড়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করবেন না। তথ্যসূত্রঃ
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সেরা ও অর্গানিক কিছু খাবারের রেসিপি।
বিভিন্ন বৈরি ঔষধ সংমিশ্রণ করার সম্ভাবনা থাকে।
যখন আপনি নিজে নিজে মন পছন্দমত একাধিক ওষুধ সেবন করেন। তখন আপনার এমন ওষুধ খাওয়ার ঝুঁকি থাকে যা নিরাপত্তার কারণে একসাথে ব্যবহার করা উচিত নয়।
যেমনঃ ভায়াগ্রা (Viagra) এবং হার্টের ওষুধ একসাথে গ্রহণ করলে রক্তচাপ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে এবং এই মিক্সিং আপনার হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
এবং এমন কিছু কিছু ঔষধ রয়েছে, যেগুলো একসাথে গ্রহণ করলে এক ঔষধ অন্য ঔষধের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এবং সেই ঔষধের কাজ নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
এবং এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে কেননা ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে আপনার লক্ষণগুলি চিকিৎসা ছাড়াই রেখে দেওয়া হয়।
সুতরাং সর্বদা আপনার ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টকে ওষুধের সম্ভাব্য নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও (drug interaction) মিথষ্ক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।
ঔষধ ভুল ডোজে সেবন করার প্রবনতা থাকে যা আপনার জীবনকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
নিজ পছন্দে (Self-medication) ভুল ডোজে ঔষধ গ্রহণের বিপজ্জনক প্রভাব আপনার জীবন-হুমকিতে ফেলতে পারে। বিশেষ করে যখন নিজের পছন্দমত ঔষধের ডোজ নিজেই অনুমান করে সেবন করেন। তখন দুর্ঘটনাক্রমে অতিরিক্ত মাত্রা গ্রহণের ঝুঁকি থাকে।
বিপরীতভাবে, আপনি যদি খুব কম মাত্রায় ওষুধ সেবন করেন, তাহলে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং আপনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
যার ফলে আপনার লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ বা উপশম করার জন্য হয়তো অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণ করতে হতে পারে, যা অতিরিক্ত মাত্রার কারণও হতে পারে। সর্বোপরি সেলফ-মেডিসিন আপনার উপর একটি বিপজ্জনক প্রভাব রাখে।
সেলফ-মেডিসিন গ্রহণের অভ্যাস আপনার জন্য মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, যা সচরাচর প্রায়শই করে।
আপনার ফার্মাসিস্ট এবং আপনার চিকিৎসক হল এমন একটি দল যারা আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং আপনার সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখতে একসাথে কাজ করে।
সুতরাং যে কোন জটিল রোগ বা শারীরিক কন্ডিশান থাকলে আপনার ডাক্তারের কাছে গিয়ে আপনার সেই উদ্বেগ জানান। এবং আপনার ফার্মাসিস্টের সাথে সেই উদ্বেগ নিয়ে বিস্তারিত জানুন।
এবং ডাক্তার ও ফার্মাসিস্টের পরামর্শ কাজে লাগিয়ে যোগাযোগ দৃঢ় করে দল আকারে কাজ করতে দিন। যেটি মৃত্যু সহ গুরুতর জটিলতা প্রতিরোধ করতে পারে এবং আপনার সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতে খুব ভালো ভূমিকা পালন করবে।